কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন-১ - | NCTB BOOK
16

বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন— প্রয়োগ ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে, কাজের ধরণ ও প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং আকার-আকৃতি ও ক্ষমতার ভিত্তিতে। নিম্নে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ ব্লক চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো-

চিত্র: কম্পিউটারের শ্রেণী বিভাগ

(ক) প্রয়োগ ক্ষেত্রের কম্পিউটার (Application based computer)

প্রয়োগ ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— 

১. সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কম্পিউটার (General Purpose Computer )

২. বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কম্পিউটার (Special Purpose Computer )

১. সাধারণ কম্পিউটার : যে সমস্ত কম্পিউটার দ্বারা সব ধরনের কাজ করা যায় সেগুলোকে সাধারণ ব্যবহারের কম্পিউটার বলে। বর্তমানে প্রচলিত মাইক্রোকম্পিউটার থেকে শুরু করে সুপার কম্পিউটার পর্যন্ত সকল কম্পিউটারই সাধারণ কম্পিউটার। এসব কম্পিউটার দিয়ে একই সঙ্গে লেখালেখির কাজ, চিত্রাঙ্কন, হিসাব-নিকাশ, জটিল প্রোগ্রামিং সহ অনেক রকমের কাজ করা যায় ।

২. বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কম্পিউটার : যে সমস্ত কম্পিউটার বিশেষ ধরনের কাজ বা সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করা হয় তাকে বিশেষ ব্যবহারের কম্পিউটার বলে। অ্যানালগ ও হাইব্রিড কম্পিউটার সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি ও ব্যবহৃত হয়। এক ধরনের কাজের জন্য তৈরি অ্যানালগ কম্পিউটার সাধারণত অন্য ধরনের কাজে ব্যবহার করা যায় না। এজন্য এ ধরনের কম্পিউটারগুলোকে বলা হয় বিশেষ ব্যবহারের কম্পিউটার।

(খ) কাজের ধরন ও প্রকৃতি ভিত্তিতে কম্পিউটার

গঠন অনুসারে বা পরিচালনার নীতি অথবা ক্রিয়ানীতি অনুসারে কম্পিউটারকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। 

১. অ্যানালগ কম্পিউটার ( Analog Computer)

২. ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)

৩. হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)

 

১. অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog Computer)

  বস্তুর গুণগত বা অবস্থানগত ভৌত পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে যে কম্পিউটার তৈরি করা হয় তাকে Analog কম্পিউটার বলে। Analog শব্দটি গ্রীক শব্দ Analogous থেকে এসেছে যার আভিধানিক অর্থ তুলনা করা বা সাদৃশ্য। অ্যানালগ পদ্ধতিতে কোনো বর্ণ বা অঙ্ক ব্যবহার করা হয় না। এ ক্ষেত্রে একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল রাশিকে অন্য একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল রাশির সাথে তুলনা করে পরিমাপ করা হয়।

  পদার্থবিজ্ঞানের নীতির উপর ভিত্তি করে অ্যানালগ কম্পিউটার কাজ করে। অর্থাৎ চাপ, তাপ, তরলের প্রবাহ ইত্যাদি পরিবর্তনশীল ডেটার জন্য সৃষ্ট বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে অ্যানালগ কম্পিউটারের ইনপুট হিসেবে ধরা হয় । প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফল সাধারণত কাঁটা বা প্লটারের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। অ্যানালগ কম্পিউটারে কোনো ধরনের মেমোরি ইউনিট ব্যবহৃত হয় না। নিম্নে ব্লক ডায়াগ্রামের মাধ্যমে অ্যানালগ কম্পিউটারের কার্যাবলি দেখানো হলো—

অ্যানালগ কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ

১. অ্যানালগ কম্পিউটার পরিবর্তনশীল বৈদ্যুতিক সিগন্যাল দ্বারা পরিচালিত হয়।

২. অ্যানালগ কম্পিউটারের ইনপুট ও আউটপুট অ্যানালগ প্রকৃতির। আউটপুট সাধারণত কাঁটা বা প্লটারের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

৩. অ্যানালগ কম্পিউটারের কাজের সূক্ষ্মতা প্রায় ০.১% । 

৪. এক ধরনের কাজের জন্য তৈরিকৃত অ্যানালগ কম্পিউটার অন্য ধরনের কাজে ব্যবহার করা যায় না।

৫. সাধারণত বিশেষ কোনো কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।

৬. অ্যানালগ কম্পিউটার একটি পরিমাপক ব্যবস্থা যা পদার্থ বিজ্ঞানের নীতিতে কাজ করে।

উদাহরণ : চার্লস ব্যাবেজের অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন ও ডিফারেন্স ইঞ্জিন।

অ্যানালগ কম্পিউটারের ব্যবহার

১. মহাকাশ, কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণের কাজে অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। 

২. কেমিক্যাল ল্যাবরেটরির মান নিয়ন্ত্রণে ও পেট্রোল পাম্পের তেল প্রবাহের পরিমাণ নির্ণয়ে অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।

৩. বাতাসের চাপ, তাপ, বায়ু প্রবাহ, বিদ্যুৎ তরঙ্গ, শব্দ তরঙ্গ ইত্যাদি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।

২. ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)

  Digital Computer এর Digital কথাটি Digit শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ অংক। যে কম্পিউটার ডিজিটাল পদ্ধতির (বাইনারি সংখ্যা 0 এবং 1) উপর ভিত্তি করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলে। বাইনারি ডিজিট 0 ও 1 এর সাহায্যে ডিজিটাল কম্পিউটার তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে।

  ডিজিটাল কম্পিউটারের সূক্ষ্মতা অনেক বেশি। কারণ যোগ- বিয়োগ করার সময় দশমিকের পর অনেক বেশি ঘর (নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত) ব্যবহার করা যায়। সাধারণত কম্পিউটার বলতে ডিজিটাল কম্পিউটারকেই বোঝানো হয়। ডিজিটাল কম্পিউটারে অ্যানালগ কম্পিউটারের মতো কোনো ক্রমাগত পরিবর্তনশীল রাশি ব্যবহার করা হয় না। তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাব নিকাশের জন্য সরাসরি অংক কিংবা সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। নিম্নে ব্লক চিত্রের মাধ্যমে ডিজিটাল কম্পিউটারের কার্যপ্রক্রিয়া দেখানো হলো-

ডিজিটাল কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ

১. ডিজিটাল কম্পিউটার ডিজিটাল সিগন্যাল (বাইনারি 0 ও 1) ব্যবহার করে সব ধরনের কাজের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।

২. ডিজিটাল কম্পিউটারের মেমোরিতে তথ্য বা উপাত্ত যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

৩. কোনো তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ফলাফল প্রিন্টারের মাধ্যমে অতি দ্রুত কাগজে ছাপানো যায়। ৪. এটির কাজের সূক্ষ্মতা ১০০% ।

৫. আধুনিক মানের ডিজিটাল কম্পিউটার যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। 

৬. ডিজিটাল কম্পিউটার একটি সংখ্যাগত ব্যবস্থা যা গণিতের নিয়মে কাজ করে।

উদাহরণ : বর্তমানের সকল কম্পিউটারই ডিজিটাল কম্পিউটার। Pentium I, II, III, IV, পামটপ, নোটবুক, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিজিটাল কম্পিউটার।

ডিজিটাল কম্পিউটারের ব্যবহার

বর্তমানে ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে অফিস আদালত, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, শিল্প প্রতিষ্ঠান, খেলাধূলা ও বিনোদন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

৩. হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)

  অ্যানালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের কার্যনীতির সমন্বয়ে যে কম্পিউটার তৈরি করা হয় তাকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলে। হাইব্রিড (Hybrid) শব্দের অর্থ হলো সংকর বা সমন্বয়। হাইব্রিড কম্পিউটারে অ্যানালগ প্রক্রিয়ায় ডেটা গৃহীত হয়। এরপর সংগৃহীত ডেটা সংখ্যায় রূপান্তর করে প্রক্রিয়াকরণের জন্য ডিজিটাল অংশে প্রেরণ করা হয়। ডিজিটাল অংশ প্রাপ্ত ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে ফলাফল প্রদান করে। এ ফলাফল মনিটর বা অন্য কোনো আউটপুট ডিভাইসে প্রদর্শিত হয়। সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার, শিল্প প্রতিষ্ঠান যেখানে অ্যানালগ ও ডিজিটাল উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে সেখানে হাইব্রিড কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া হাসপাতালের ICU (Intensive Care Unit), রোগীর রক্ত চাপ, শরীরের তাপমাত্রা, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ ধরনের কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 

 হাইব্রিড কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যসমূহ

১. হাইব্রিড কম্পিউটারের ইনপুট অ্যানালগ প্রকৃতির ও আউটপুট ডিজিটাল পদ্ধতির। 

২. বিশেষ বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।

৩. তুলনামূলকভাবে দাম বেশি।

৪. গঠন জটিল প্রকৃতির।

উদাহরণ : হাইব্রিড কম্পিউটারের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো— ECG মেশিন, MRI মেশিন, আধুনিক রাডার, সোনার ( SONAR ) ইত্যাদিতে ব্যবহৃত কম্পিউটার।

হাইব্রিড কম্পিউটারের ব্যবহার

১. বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি বিষয়ের বিভিন্ন জটিল ও কঠিন সমস্যা হাইব্রিড কম্পিউটারের মাধ্যমে অতি সহজে ও দ্রুততার সাথে সমাধান করা যায়।

২. পরীক্ষাগারে ঔষুধের মান নির্ণয়ে, প্রাণী নিয়ে গবেষণায়, পরমাণুর গঠন প্রকৃতি জানার কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।

৩. বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের গুণাগুণ নির্ণয়ের কাজে এবং দূরপাল্লার আকাশযান চালকের প্রশিক্ষণের কাজে হাইব্রিড কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।

৪. হাইব্রিড কম্পিউটার অত্যন্ত দামী তাই শুধুমাত্র বিশেষ কাজে এই ধরনের কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। 

৫. হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে হাইব্রিড কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।

অ্যানালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য কী?

অ্যানালগ কম্পিউটারডিজিটাল কম্পিউটার
১. Analog Computer পরিবর্তনশীল সংকেত বা Analog সংকেত ব্যবহার করে কাজের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।১. Digital Computer ডিজিটাল সংকেত 0 ও 1 দিয়ে কাজের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
২. অ্যানালগ কম্পিউটার সরবরাহকৃত উপাত্তগুলোকে সরাসরি বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করে।২. ডিজিটাল কম্পিউটার সংখ্যা, বর্ণ বা চিহ্নকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করে।
৩. অ্যানালগ কম্পিউটার প্রক্রিয়াজাত ফলাফলকে সাধারণত ঘড়ির কাঁটার সাহায্যে অথবা গ্রাফের সাহায্যে ছবি এঁকে প্রদর্শন করে।৩. ডিজিটাল কম্পিউটার প্রক্রিয়াজাত ফলাফল সরাসরি মনিটরে বা অন্যকোনো আউটপুট ডিভাইসে প্রদর্শন করে।
৪. এটি ডিজিটাল কম্পিউটারের চেয়ে কম নির্ভরশীল ও কম দ্রুত গতিসম্পন্ন।৪. এটি তুলনামূলকভাবে ভ্রমশূন্য, নির্ভরশীল এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন।
৫. রাসায়নিক শিল্প কারখানা, পেট্রোলিয়াম ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।৫. লেখালেখি ও হিসাব নিকাশ থেকে শুরু করে ছবি নির্মাণ, স্থাপত্য ও নির্মাণ কাজের নকশা তৈরিতে ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় ।
৬. অ্যানালগ কম্পিউটার পরিমাপক পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশ করে তাই এর সূক্ষ্মতা কম ।৬. ডিজিটাল কম্পিউটার গণনা পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশ করে তাই এর সূক্ষ্মতা বেশি।
৭. মোটর গাড়ীর স্পিডোমিটার, স্লাইড রুল, অপারেশনাল Amplifier ইত্যাদি অ্যানালগ কম্পিউটার।৭. আধুনিক কম্পিউটার বলতে ডিজিটাল কম্পিউটারকে বোঝায়। যেমন ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ইত্যাদি।

 

Content added || updated By
Promotion